ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

স্বাস্থ্য ও ফিটনেস

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি একটি প্রচলিত সমস্যা, যা খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং পেটে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, গ্যাস, এবং অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। জীবনযাপনের ভুল ধরণ, খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক চাপ প্রায়ই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার মূল কারণ হয়ে থাকে। তবে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় মেনে চললে গ্যাস্ট্রিক দূর করা সম্ভব।

১. নিয়মিত খাবার গ্রহণ

অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, দীর্ঘ সময় না খাওয়া, এবং অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিক বাড়ে। এজন্য খাবারের মাঝে দীর্ঘ বিরতি না দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ছোট ছোট অংশে খাবার গ্রহণ করুন। এতে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হবে না এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ হবে।

২. পানি পান করা

খাবারের পর বা মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে পানি পান করা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধানে সহায়ক। পানি পেটে অ্যাসিডের ঘনত্ব কমিয়ে হজমে সহায়তা করে। তবে খুব বেশি পানি একসঙ্গে না পান করাই ভালো।

৩. মশলাযুক্ত খাবার পরিহার

অতিরিক্ত মশলাযুক্ত এবং ঝাল খাবার গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়। তাই গ্যাস্ট্রিক এড়াতে এ ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি টক বা অম্লীয় খাবারও কমিয়ে আনা উচিত, কারণ এগুলো অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়ায়।

৪. আদা ও মৌরি

আদা এবং মৌরি উভয়েই প্রাকৃতিকভাবে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। প্রতিদিন সকালে বা খাবারের পরে আদা চা বা মৌরি চিবিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা অনেকটা কমে যায়। এগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং পেটে গ্যাস তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করে।

৫. নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যায়াম

শরীরচর্চা বা ব্যায়াম হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করে। খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করলে পেটে গ্যাস জমা হবে না, ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমবে।

৬. মানসিক চাপ কমানো

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস গ্যাস্ট্রিকের একটি অন্যতম কারণ। মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান বা মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। এতে শুধু গ্যাস্ট্রিক নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে।

৭. এলাচ এবং জিরা

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানে এলাচ এবং জিরা খুবই কার্যকর। এলাচ হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং পাকস্থলীতে তৈরি হওয়া অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে। খাবারের পরে জিরার পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিক কমে যায় এবং পাকস্থলীর গ্যাস নির্গত হয়।

৮. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সাহায্য করে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিড ব্যালেন্স করে এবং খাবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।

৯. ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো

ধূমপান এবং মদ্যপান গ্যাস্ট্রিক সমস্যার অন্যতম কারণ। এগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে পেটের সমস্যা তৈরি করে। তাই গ্যাস্ট্রিক এড়াতে ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে দূরে থাকা জরুরি।

উপসংহার

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খাবার এবং জীবনযাপনের ধরণে কিছু পরিবর্তন আনাই যথেষ্ট। নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ব্যায়াম, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি সহজেই গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে বাঁচতে পারেন।

এছাড়াও, প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবহার করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরও পড়ুন : আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা

ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি এমন একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায়ই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে। এটি খাদ্যাভ্যাসের গণ্ডগোল, অপর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ বা অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাবার খাওয়ার কারণে হতে পারে। ওষুধ ছাড়াও গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা সহজেই ঘরে বসে অনুসরণ করা যায়। আসুন জেনে নিই এমন কিছু কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি:

১. আদা:

আদার রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আরাম দেয়। এক টুকরো কাঁচা আদা চিবিয়ে খেলে বা আদার রস করে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার উপশম হয়।

২. পুদিনা পাতা:

পুদিনা পাতার রয়েছে প্রাকৃতিক হজমশক্তি বৃদ্ধির ক্ষমতা। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে এক গ্লাস গরম পানির সাথে কয়েকটি পুদিনা পাতা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেটে গ্যাস জমতে দেয় না।

৩. লবঙ্গ:

লবঙ্গ গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য খুবই উপকারী। লবঙ্গ হজমশক্তি উন্নত করে এবং গ্যাসের সমস্যায় তাৎক্ষণিক আরাম দেয়। প্রতিদিন ২-৩টি লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে অথবা লবঙ্গের গুঁড়ো গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।

৪. বেকিং সোডা:

বেকিং সোডা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসাবে কাজ করে এবং পেটের অ্যাসিড কমাতে সহায়ক। এক গ্লাস পানির সাথে এক চিমটি বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৫. জিরা:

জিরার রয়েছে পেটের গ্যাস দূর করার অসাধারণ ক্ষমতা। গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পেতে এক চা চামচ জিরা গুঁড়ো এক গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৬. ঠান্ডা দুধ:

ঠান্ডা দুধ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে পারে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, যা পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ প্রতিরোধ করে। এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ দিনে ১-২ বার পান করা যেতে পারে।

৭. অ্যালোভেরা জেল:

অ্যালোভেরা প্রাকৃতিকভাবে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেটের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল বা রস প্রতিদিন একবার করে খাওয়া গেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটা কমানো সম্ভব।

৮. ফেনুগ্রিক বীজ (মেথি):

মেথি বীজ হজম শক্তি বাড়াতে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর। এক চা চামচ মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর হয়।

৯. ক্যামোমাইল চা:

ক্যামোমাইল চায়ে রয়েছে প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা যা পেটে সৃষ্ট অস্বস্তি ও গ্যাস থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিদিন ক্যামোমাইল চা পান করলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা অনেকটা কমানো সম্ভব।

১০. পেঁপে:

পেঁপে এমন একটি ফল যা হজম প্রক্রিয়ায় খুবই উপকারী। এতে থাকা এনজাইম পেপেইন খাবার হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করে। পেঁপে নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরও পড়ুন : অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা

Gastritis, painful stomach inflammation process, adult male in pain

গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় হোমিও

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি হলো আমাদের পেটের একটি সাধারণ সমস্যা, যা অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়মিত খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার, বা মানসিক চাপের কারণে হতে পারে। যদিও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানে অনেক ওষুধ এবং ঘরোয়া উপায় রয়েছে, তবুও হোমিওপ্যাথি এর একটি প্রাকৃতিক এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে। হোমিওপ্যাথির বিশেষত্ব হলো এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া রোগের মূল সমস্যাটি নিরাময় করে।

এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব কীভাবে হোমিওপ্যাথি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে এবং এর প্রাকৃতিক সমাধানগুলি কী।

হোমিওপ্যাথিতে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য আলাদা হয়। কারণ রোগীর শারীরিক অবস্থান এবং মানসিক পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। নিম্নে কিছু সাধারণ হোমিওপ্যাথি ওষুধ উল্লেখ করা হলো, যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিরাময়ে কার্যকর হতে পারে:

১. নাক্স ভমিকা (Nux Vomica)

নাক্স ভমিকা একটি বহুল ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথি ওষুধ, যা বিশেষ করে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বা মদ্যপান থেকে সৃষ্ট গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে কার্যকর। এটি গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড, গ্যাস, বমি বমি ভাব, এবং পেটে ব্যথা দূর করতে সহায়ক।

২. কার্বো ভেজ (Carbo Veg)

যদি আপনার পেট ফুলে ওঠে এবং প্রচণ্ড গ্যাস তৈরি হয়, তবে কার্বো ভেজ একটি উপকারী ওষুধ। এটি হজমে সহায়তা করে এবং পেটের অস্বস্তি কমিয়ে দেয়।

৩. লাইকোপোডিয়াম (Lycopodium)

লাইকোপোডিয়াম মূলত গ্যাস এবং পেটের ফাঁপা ভাব দূর করতে ব্যবহৃত হয়। যারা খাবার গ্রহণের পরেই পেটের অস্বস্তি বা গ্যাসের সমস্যায় ভুগেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।

৪. আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম (Argentum Nitricum)

যদি আপনি মানসিক চাপ থেকে গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম একটি ভালো সমাধান। এটি মানসিক চাপজনিত পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া, এবং গ্যাস নিরাময়ে কার্যকর।

৫. চায়না (China)

চায়না মূলত অতিরিক্ত গ্যাস উৎপন্ন হলে এবং দুর্বলতা অনুভূত হলে ব্যবহৃত হয়। যারা খাবার খাওয়ার পর খুব বেশি গ্যাসে ভোগেন, তাদের জন্য এটি উপকারী।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরও পড়ুন : কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও 10 টি অপকারিতা

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে কিছু সাধারণ টিপস

হোমিওপ্যাথির পাশাপাশি কিছু অভ্যাস মেনে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব:

  1. নিয়মিত সময়ে খাবার গ্রহণ করুন: দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  2. মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত মশলাযুক্ত এবং ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ায়।
  3. শরীরচর্চা: হালকা ব্যায়াম এবং নিয়মিত হাঁটা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়।
  4. পানি পান: পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে শরীরের এসিড লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং গ্যাসের সমস্যা কমে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, গ্যাস্ট্রিক বা বুকে ব্যথা একটি খুব সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে খাবার খেতে না পারা, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া, ধূমপান, এবং মানসিক চাপের মতো বিষয়গুলি এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় মেনে চললে আপনি গ্যাস্ট্রিক এবং বুকে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরও পড়ুন :  ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

গ্যাস্ট্রিক ও বুকে ব্যথার কারণ

গ্যাস্ট্রিক সাধারণত পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদনের কারণে হয়। এই অ্যাসিড পাকস্থলীর ভেতরের আবরণে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে বুকে বা পেটে ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়া খাদ্য হজমের সমস্যা, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়া, বা নিয়মিত ভারী খাবার গ্রহণ করলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক ও বুকে ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

১. আদা চা পান

আদার মধ্যে প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে, যা গ্যাস্ট্রিক ও বুকে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আদা চা পান করলে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে।

২. ঠান্ডা দুধ

ঠান্ডা দুধ পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিডকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে এবং বুকে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমায়। তাই যখনই বুকে ব্যথা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনুভব করবেন, তখন এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করতে পারেন।

৩. এলাচ চিবানো

এলাচ পাকস্থলীর অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সময় এলাচ চিবালে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।

৪. ত্রিফলা বা মৌরি চা

ত্রিফলা একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ঔষধ, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং পাকস্থলীর সমস্যা কমায়। মৌরি চা পান করলেও গ্যাস্ট্রিক ও বুকে ব্যথা কমতে পারে।

৫. পর্যাপ্ত পানি পান

শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে পাকস্থলীর অ্যাসিড আরও বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। গ্যাস্ট্রিক বা বুকে ব্যথা হলে একগ্লাস পানি পান করতে পারেন।

৬. লেবু ও মধু

লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং খাবার হজমেও সাহায্য করে।

৭. হালকা খাবার খাওয়া

গ্যাস্ট্রিকের সময় অতিরিক্ত ভারী খাবার না খেয়ে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। যেমন—ফল, সবজি, স্যুপ ইত্যাদি। এতে হজম ভালো হয় এবং পাকস্থলীর চাপ কমে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

  • অতিরিক্ত মশলাযুক্ত ও ভাজা-পোড়া খাবার থেকে বিরত থাকুন।
  • ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান এবং একবারে বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে খান।
  • নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করুন। এতে শরীরের হজমপ্রক্রিয়া সচল থাকে।

চিকিৎসা নেওয়ার সময়

যদি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নিয়মিত হয় এবং ঘরোয়া উপায়ে নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যখন বুকে তীব্র ব্যথা হয় বা বুকের ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা ঘাম দেখা দেয়, তখন দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরও পড়ুন :  ওজন কমানোর উপায়

গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এমন একটি অসুবিধা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিকতাকে ব্যাহত করতে পারে। এই সমস্যার সমাধান পেতে, সঠিক ব্যায়াম ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্যাস্ট্রিক সমস্যার মূল কারণ হলো অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন। তাই কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা আপনার পাচনতন্ত্রের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যার দ্রুত সমাধানে সহায়তা করে।

১. পবনমুক্তাসন (Pawanmuktasana)

পবনমুক্তাসন বা গ্যাস মুক্তির আসন পেটের গ্যাস কমাতে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে বিশেষ সহায়ক। এই আসনটি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং পেটে আটকে থাকা বায়ু মুক্ত করে দেয়।

কিভাবে করবেন:

  • প্রথমে মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
  • ধীরে ধীরে আপনার দুই পা হাঁটু ভেঙে বুকে নিয়ে আসুন।
  • হাত দিয়ে আপনার পা দুটিকে জড়িয়ে ধরুন।
  • মাথা উঁচু করে হাঁটুতে ছোঁয়ার চেষ্টা করুন।
  • ৩০ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ধরে রাখুন এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।

২. ভুজঙ্গাসন (Bhujangasana)

ভুজঙ্গাসন বা কোবরা পোজ হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করে। এটি পেটের পেশি শক্তিশালী করে এবং পেটের ভেতরের চাপ কমাতে সহায়ক।

কিভাবে করবেন:

  • মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন।
  • আপনার হাত কাঁধের নিচে রাখুন এবং ধীরে ধীরে মাথা ও বুক উঁচু করুন।
  • কোমর পর্যন্ত শরীরটি উঠিয়ে রাখুন এবং দৃষ্টিকে সামনের দিকে রাখুন।
  • এই অবস্থায় ১৫-২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।

৩. অর্ধ মৎস্যেন্দ্রাসন (Ardha Matsyendrasana)

এই মৃদু টুইস্টিং আসন হজমশক্তি বাড়ায় এবং পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে।

কিভাবে করবেন:

  • প্রথমে মাটিতে সোজা হয়ে বসুন।
  • ডান পা বাঁকিয়ে বাম হাঁটুর উপরে রাখুন এবং বাম হাত দিয়ে ডান পা ধরে পেছনে দিকে টানুন।
  • সামনের দিকে বাম কাঁধ ঘুরিয়ে রাখুন।
  • এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং অপর দিকেও একইভাবে করুন।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

৪. শবাসন (Shavasana)

শবাসন মানসিক চাপ কমায় এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যার ফলে সৃষ্ট অস্বস্তি দূর করতে সহায়ক। এটি শরীরকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্রাম দেয়।

কিভাবে করবেন:

  • প্রথমে মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
  • হাত ও পা স্বাভাবিকভাবে পাশে রাখুন।
  • চোখ বন্ধ করুন এবং সম্পূর্ণ শরীরকে শিথিল করুন।
  • ৫-১০ মিনিট ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ দিন।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরও পড়ুন : কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

গ্যাস্ট্রিক দূর করতে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন

ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার উপরেও নজর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, মশলাদার খাবার এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন এবং হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

গ্যাস্ট্রিক দূর করার ভেষজ উপায়

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যার জন্য বেশ কয়েকটি ভেষজ উপায় রয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবে উপশম করতে সহায়ক হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ ভেষজ উপায় দেওয়া হলো:

১. জিরা:

জিরা গ্যাস্ট্রিক কমাতে সহায়ক। এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ জিরা সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে খেতে পারেন। এটি হজমে সাহায্য করে এবং পেটের গ্যাস দূর করতে কার্যকর।

২. আদা:

আদা হজমে সাহায্য করে এবং পেটের গ্যাস কমাতে সহায়ক। আপনি এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেতে পারেন বা আদার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে পারেন।

৩. পুদিনা পাতা:

পুদিনা পাতা হজম শক্তি বাড়ায় এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সহায়ক। কিছু পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন বা পুদিনা পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি খেতে পারেন।

৪. ধনিয়া পাতা:

ধনিয়া পাতা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেটে গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমায়। এক গ্লাস পানিতে কিছু ধনিয়া পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি পান করুন।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

৫. তুলসি পাতা:

তুলসি পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে যা পেটের ব্যথা এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সহায়ক। কিছু তুলসি পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন বা তুলসি পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি খেতে পারেন।

৬. মৌরি:

মৌরি পেটের গ্যাস ও হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়ক। এক চা চামচ মৌরি পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি খেতে পারেন।

৭. অ্যালোভেরা:

অ্যালোভেরা জুস গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির উপশমে সহায়ক। সকালে খালি পেটে অ্যালোভেরা জুস খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

এছাড়া, ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, প্রচুর পানি পান করা এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরও পড়ুন : খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায়


চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও কিছু সতর্কতা এবং জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি চিরতরে কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখানে কিছু কার্যকরী উপায় দেয়া হলো:

১. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন:

  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান: তাজা ফল, শাকসবজি, এবং পূর্ণ শস্য খান। তেল-চর্বি ও বেশি মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
  • প্রচুর পানি পান করুন: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
  • ছোট অংশে বারবার খাবার খান: বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে অল্প করে বারবার খাবার খেলে অ্যাসিড উৎপাদন কমে।
  • মসলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: এসব খাবার হজমে সমস্যা করে এবং অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ায়।
  • অতিরিক্ত চা-কফি ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন

২. জীবনযাত্রার পরিবর্তন:

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন: এগুলো অ্যাসিড উৎপাদন বাড়াতে পারে।
  • ঘুমানোর আগে অন্তত ৩ ঘণ্টা কিছু খাবেন না: খাবার হজমের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত।
  • খাবারের পরপরই শুয়ে পড়বেন না: এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি বাড়ে।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

৩. প্রাকৃতিক উপায়:

  • আদা চা পান করুন: আদা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং হজমে সাহায্য করে।
  • মৌরি বা বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি: মৌরি এবং বেকিং সোডা হজমে সাহায্য করে এবং অ্যাসিড নিরপেক্ষ করে।
  • অ্যালোভেরা জুস পান করুন: এটি হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়।

৪. ডাক্তারের পরামর্শ নিন:

যদি ঘরোয়া উপায়েও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ না হয়, তবে একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন। কিছু ওষুধ বা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এই নিয়মগুলো মেনে চললে গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে অনেকাংশে দূর করা সম্ভব।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরও পড়ুন : নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

গ্যাস্ট্রিক দূর করার খাবার

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি দূর করার জন্য কিছু খাবার কার্যকরী হতে পারে। নিচে কিছু খাবার তালিকা দেওয়া হলো যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে:

১. আদা:

আদার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলী আছে, যা পেটের অম্লতা কমাতে সহায়ক।

২. দই:

প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সহায়তা করে।

৩. কলা:

কলায় প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড রয়েছে, যা পেটের অ্যাসিড কমাতে পারে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।

৪. ওটমিল:

ওটমিল ফাইবার সমৃদ্ধ যা হজম সহজ করে এবং গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করে।

৫. শশা:

শশায় পানির পরিমাণ বেশি থাকে, যা হজম সিস্টেমকে শান্ত করে এবং অ্যাসিডিটি কমায়।

৬. সবুজ শাকসবজি:

ব্রকলি, পালং শাক, কপি ইত্যাদি সবুজ শাকসবজি হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

আপনারা পড়ছেন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

৭. নারকেলের পানি:

নারকেলের পানিতে অ্যালকালাইন বৈশিষ্ট্য থাকে যা পেটের অ্যাসিড নিঃসরণ কমায় এবং শরীরকে আর্দ্র রাখে।

৮. সেদ্ধ আলু:

আলু হজমে সহায়ক এবং পেটের অ্যাসিড কমাতে সহায়তা করে।

৯. মৌরি:

মৌরি চিবিয়ে খেলে পেটে গ্যাস তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক।

১০. মধু:

এক চামচ মধু গরম পানির সাথে খেলে পেটের গ্যাস এবং অ্যাসিড সমস্যা দূর হতে পারে।

এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমতে পারে। তবে যদি সমস্যা খুব বেশি হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *